এ কিতাব সাধারণ মুসলমানের দীনী ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে। আল্লামা নাওয়াবী রহ. যখন থেকে এটি সংকলন করেছেন প্রায় সে সময় থেকেই এ কিতাব সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এ কিতাব আরব-অনারব নির্বিশেষে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে দীনী শিক্ষালয়ের মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্য তালিকাভুক্ত। তাছাড়া ঘরে, মজলিসে ও মসজিদে দীনী তা‘লীমের হালকায় এ কিতাবের সম্মিলিত পাঠ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই জারি আছে।আল্লাহপাক আল্লামা নাওয়াবী রহ.কে তাওফীক দিয়েছেন যে, তিনি হাদীসের উৎসগ্রন্থসমূহ থেকে একান্তই সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহ এ কিতাবে সংকলিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। কিতাবের বিন্যাসও অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। একজন মুসলিমের প্রয়োজনীয় ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক তথা সার্বিক দীনী বিষয়ের একটি পূর্ণচিত্র এর দ্বারা লাভ করা যায়।অনেকের মতে সমগ্র বিশ্বে হাদীস বিষয়ক কিতাবসমূহের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও পঠিত অনন্য হাদীস সংকলন এই “রিয়াযুস সালেহীন” নামক কিতাব।এ খণ্ডে মোট বারোটি অধ্যায়ের ৮১টি হাদীছের বিস্তারিত ব্যাখ্যা স্থান পেয়েছে। অধ্যায়গুলোর মৌল শিরোনাম এখানে উদ্ধৃত হলো- (অধ্যায় ২৭) মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ -মমতার বর্ণনা; (অধ্যায় ২৮) মুসলিম ব্যক্তিবর্গের দোষত্রুটি গোপন রাখা প্রসঙ্গ এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা; (অধ্যায় ২৯) মুসলমানদের প্রয়োজন সমাধা করা; (অধ্যায় ৩০) সুপারিশ করার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য; (অধ্যায় ৩১) মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত; (অধ্যায় ৩২) দুর্বল, গরীব ও অখ্যাত-গুরুত্বহীন মুসলিমদের মর্যাদা; (অধ্যায় ৩৩) ইয়াতীম, কন্যাসন্তান, সর্বপ্রকার দুর্বল, গরীব-মিসকীন ও দুস্থ লোকদের প্রতি সদয় আচরণ, তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও মায়া-মমতা প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে নম্র-কোমল আচরণ প্রসঙ্গ; (অধ্যায় ৩৪) স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ; (অধ্যায় ৩৫) স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার; (অধ্যায় ৩৬) পরিবার-পরিজনের উপর অর্থব্যয়; (অধ্যায় ৩৭) প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান করা; (অধ্যায় ৩৮) পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যিকতা।শিরোনাম থেকেই এ খণ্ডের বিশেষ গুরুত্বের দিকটি ফুটে উঠছে। এবারের এ খণ্ডের সবক’টি অধ্যায় ও হাদীছেই حُقُوْقُ وَ آدَابُ الْمُعَاشَرَةِ তথা ইসলামের পারিবারিক ও সামাজিক আচার, আদাব ও অধিকার প্রভৃতির শিক্ষা ও নির্দেশনা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়েছে। এবং আলহামদুলিল্লাহ এসবের ব্যাখ্যাও অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে হৃদয়গ্রাহী ও জীবন্ত ভাষায় উঠে এসেছে, যা পাঠককে এবং দ্বীনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রতিটি মানুষকে ভাবতে ও সংশোধনের পথে এগুতে উদ্বুদ্ধ করবে, সহায়তা যোগাবে–আশা করি। যদি অন্তত এ হাদীছসমূহেরই সবক আমরা নিতে পারতাম তাহলে আজ আমাদের পরিবার ও সমাজ-জীবনের চিত্রটাই ভিন্নরকম হতো, আমাদের অবস্থান ও ভাগ্যই বদলে যেতো!! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ভেতর শেকড়ে ফেরার নবজাগরণ সৃষ্টি করুন।
Sale!